গ্রীষ্মকাল, আমাদের দেশে এক বিশেষ ঋতু, যা বছরের অন্য ঋতুগুলোর থেকে ভিন্ন। সাধারণত মার্চ মাসের শেষের দিকে বা এপ্রিলের শুরু থেকে শুরু হয়ে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত থাকে এই ঋতুটি। গরমকাল আমাদের পরিবেশ এবং জীবনের ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
গ্রীষ্মকালে দিনের তাপমাত্রা প্রচণ্ড বাড়ে, যা আমাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। সূর্যের তাপ সরাসরি পৃথিবীতে প্রবেশ করে, ফলে দিনের বেলায় তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও বেশি উঠতে পারে। প্রচণ্ড রোদে মানুষের দেহের পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়, ফলে ঘামের মাধ্যমে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।
গরমকালে সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি হলো পানি স্বল্পতা। প্রচণ্ড তাপে মানুষের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায়, তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি পানি পান করা প্রয়োজন। পানি স্বল্পতা থেকে ডিহাইড্রেশন, হিটস্ট্রোক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। গ্রীষ্মের সময় শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে হালকা, আরামদায়ক এবং সুতি পোশাক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গ্রীষ্মকালের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলো ফলের মৌসুম। এ সময়ে বাজারে আম, কাঁঠাল, তরমুজ, লিচু ইত্যাদি রসালো ফল পাওয়া যায়, যা শরীরের পানির চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। এসব ফল তৃষ্ণা মেটাতে এবং শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে কার্যকর।
গরমের সঙ্গে জীববৈচিত্র্যেও কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। নদী, পুকুর, ও খালগুলো শুকিয়ে যায়, যার ফলে মৎস্যজীবী ও কৃষকদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। অনেক গাছপালা পানির অভাবে শুকিয়ে যায় এবং কৃষিকাজে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
তবে গ্রীষ্মকালের কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। এ সময় সূর্যের আলো বেশি পাওয়া যায়, যা ফসলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। অনেক শস্য যেমন ধান, গম, ও অন্যান্য গ্রীষ্মকালীন শস্যের উৎপাদন ভালো হয়। তাছাড়া দীর্ঘ দিনের আলো মানুষকে বেশি সময় ধরে কাজ করতে সাহায্য করে।
গরমকাল আমাদের জীবনযাত্রায় নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এলেও, এর উপকারী দিকগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমরা সহজেই এই ঋতুকে কাটিয়ে উঠতে পারি। নিয়মিত পানি পান, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, এবং শরীরের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে গরমকালের প্রতিকূল প্রভাবগুলোকে সামলানো সম্ভব।